‘সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের ভবিষ্যত নেই’
অনলাইন ডেক্স:
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও ইউজিসি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, “সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর অদূর ভবিষ্যতে হবে না। এটা ভূ-রাজনৈতিক কারণে। ভারত চীনকে বঙ্গোপসাগরে আসতে দিতে চায় না। এতে ভারতের ভেটো (আপত্তি) রয়েছে।“২০১৪ সালে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে এমওইউ স্বাক্ষরের কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে সেটা হয়নি।”শনিবার চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার আয়োজিত ‘রিজিওনাল কানেকটিভিটি: দ্য কারেন্ট চ্যালেঞ্জ ফর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ প্রবন্ধে এ কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল বলেন, “চীনকে না দিন, গভীর সমুদ্র বন্দরের বিষয়ে অন্য অনেকের আগ্রহ আছে। হল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আবুধাবি আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের প্রাধান্য দিন।”চট্টগ্রাম বন্দর ‘লাইটার পোর্টে’ পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২২ ফুটের বেশি গভীরতার কোনো জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। বড় জাহাজ সাগরে দাঁড়িয়ে থাকে। ছোট জাহাজে করে সেখানে পণ্য নিয়ে দিতে হয়।”
‘ভূ-রাজনৈতিক’ কারণে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পের কাজও ‘সহজে’ হবে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, “দুই-তিন বছর আগেও মিয়ানমার চীনকে বন্ধু মনে করত। এখন মিয়ানমার আমেরিকাকে বন্ধু মনে করে। তাই তারা চীনকে দূরে সরিয়েছে। মাঝখান থেকে আমরা আটকা পড়েছি।”

প্রবন্ধে ‘আঞ্চলিক সংযুক্তি’কে (রিজিওনাল কানেকটিভিটি) পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইস্যু হিসেবে দেখার আহ্বান জানান ড. মইনুল।“বাংলাদেশে এমন ধারণা আছে-ভারতকে সব দিলাম আমি কিছুই পেলাম না।“তাই সংযুক্তিকে আঞ্চলিক ইস্যু না করলে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে সব আটকে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চাৎভূমিতে (হিন্টার ল্যান্ড) শুধু ভারতের সেভেন সিস্টার নয়, নেপাল, ভুটান, চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের অনেক অঞ্চল আছে।”টেকানফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে খুলনা পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাকে ‘সোনার খনি’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “এখানে অনেক বন্দর হতে পারে। আরও একাধিক বন্দর হোক। এখানে শুধু ভারতকে সুবিধা দেওয়া নয় এর মাধ্যমে আমরা পুরো অঞ্চলে উইন-উইন সিচুয়েশনে যেতে পারি।
ভারত কালাদান রিভার প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প করছে জানিয়ে ড. মইনুল বলেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। “এটি হলে ভারতের সেভেন সিস্টার মিয়ানমারের সিতওয়েতে (পুরনো আকিয়াব) থাকা গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধা পাবে। তখন আর তারা বাংলাদেশের উপর নির্ভর করবে না। তখন হয়ত এ সুযোগও আমরা হারাব।”আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে স্থলবন্দর ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, উপকূলীয় নৌচলাচল জোরদার করা, সীমান্ত হত্য বন্ধ, গরু সরবরাহে কড়াকড়ি বন্ধ এবং ভারতীয় ভিসা প্রদান পদ্ধতি সহজ ও দুর্নীতিমুক্ত করার আহ্বান জানান এই অর্থনীতিবিদ।পরে তার প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন ও অর্থনীতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ।অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত।
সুত্র:বিডিনিউজ২৪.কম